#নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
পর্ব ৫
কলমে: আৃঁদ্রৃঁ আৃঁদৃিঁ (MK)
তোহামনি আর একটা ছেলে চার দুই ঠোঁট এক করে আছে৷ কাব্য স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে দেখলো। ক্লাসটা ফাকায় ছিলো। কাব্যকে ক্লাসে ঢুকতে দেখো ছেলেটা কাব্যের পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। তোহামনি কাব্যকে দেখে চমকে গেলো। কাব্য তোহামনিকে জিঙ্গেস করলো
– এসব কি? ছেলেটা কে?
– আমার হবু জামাই।
কাব্যের মনের ভেতর কামড় দিয়ে উঠলো
– মানে কি?
– বাংলা বুঝিস না। ও আমার হাসবেন্ড।
– তাহলে আমি কে?
– তুই কে তা তুই ভালো জানিস।
তোহামনি ক্লাস থেকে বের হতে যাবে। কাব্য হাতটা ধরলো। তখনি তোহামনি কাব্যের গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিয়ে
– ছোট লোকের বাচ্চা। তোর সাহস টা কম না তুই আমার হাত ধরেছিস। তোর এই নোংরা হাত দিয়ে আমাকে ধরিয়েছিস।
– তুমি আমার সাথে এমন করছো কেন? আমি তোমাকে ভালোবাসি।
– কিসের ভালোবাসা। তোর সাথে এখন এটা করছি। ফের যদি সামনে আসিছ তাহলে এর থেকে বেশি খারাপ হবে।
কাব্য কান্না সরে
– প্লিজ তুমি আমাকে ছেড়ে যেয়ো না। তুমি যা বলেছো সব কিছুই তো শুনেছি কেন এমন করছো।
– তোর মতো ফকিরের সাথে আমার যায় না। কি আছে তোর? কিছু নেই আমার হবু হাসবেন্ড কোম্পানির ওনার। কি নেই ওর? টাকা গাড়ি বাড়ি সব আছে।
– তাহলে এতোদিন তুমি আমাকে ভালোবাসোনি একটু ও।
– না। তোর মতো গাইয়া ক্ষ্যাতকে কে ভালোবাসবে।
– তাহলে এতদিন
– তোর থেকে টাকা নোটস্ পাওয়ার জন্য টাইম পাস। এরপর থেকে তোকে জেনো আমার সামনে না দেখি। গ্রাম থেকে উঠে এসে আসছে শহরের মেয়ের সাথে রিলেশন করতে।
– তোমার কিছু হয়েছি। তোমার ফ্যামিলি নিশ্চয় কিছু বলেছে যার জন্য এমনটা করছো।
– আমার ফ্যামিলি কিছু বলেনি। আর তোকে যেগুলো বললাম সবই সত্য। তোর মতো গাইয়া ভূতের সাথে আমার যায় না। সামনের সপ্তাহে আমার বিয়ে। আমার আশ পাশে তোর না দেখি।
তোহামনি কথাগুলো বলে চলে গেলো। কাব্য মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। বসে পড়লো কাব্য চোখ বেয়ে পানি ঝরছে অঝরে। মনে মনে বলছে আমাকে একা করে দিয়ে যেয়ো না। আমি থাকতে পারবো না। কাব্যের মাথা ভার হয়ে গেলো৷ কেমন জেনো ঘোরাতে লাগলো। কাব্য চোখের পানি মুছে ক্যাম্পাস ছেড়ে বের হয়ে গেলো। রাস্তার পাশ দিয়ে হাটছে। এই কষ্টটা সহ্য করতে পারছে না।
রেহানা বেগম করিম মিয়াকে বললো
– পোলাটা কি কল দিছে।
– না দেয়নি। আমি অনেকবার কল দিছি কিন্তু ফোন বন্ধ।
– মনে হয় চার্জ নেই ফোনে।
– পৌঁছালো কি না জানতে পারলাম না।
– ফোনটা খুলে তো কল দিয়ে বললে পারতো।
– হুম। এখন মনে হয় ক্লাসে গেছে। বিকালে ফোন দিবানি।
– হ্যা দিয়ো।
কাব্য একটা মেয়ের সাথে ডাক্কা খেলো । কাব্য পড়ে গেলো। মেয়েটা অবাক হয়ে গেলো। মেয়েটা কাব্যকে তুললো৷
– আপনি কি অসুস্থ।
কাব্য মাথা নাড়ালো। মেয়েটার পাশ কাটিয়ে আনমনে হাটতে লাগলো৷ মেয়েটা অবাক হয়ে গেলো। কাব্যের হাতের কিছুট কেটে গেলো।
( মেয়েটা আর কেউ নই আদিবা নওরিন। কাব্যের সাথে একই ভাসিটি একই ডিপার্টমেন্টে। কখনো কাব্যের সাথে বলেনি। তিথি কাব্যের ভার্সিটি ফ্রেন্ড৷ আদিবা নওরিন ও তিথির ফ্রেন্ড। তিথির থেকে আদিবা নওরিন সবকিছু শুনছিলো । খুব সাধারণ একটা মেয়ে। সাধারণ ভাবেই চলফেরা করে।)
আদিবা কাব্যকে ডাক দিলো। কাব্য শুনে না ডাক। হেটে যাচ্ছে। আদিবা কাব্যের সামনের যেয়ে দাঁড়িয়ে
– আপনাকে ডাকতাছি কানে যায়। না।
কাব্যের চোখ দুটো ফোলা। ফোলা চোখ নিয়ে আদিবার দিকে তাকালো।
– আপনার হাত কেটে গেছে খেয়াল তো করেননি। ব্যথা লাগে না।
আদিবা ব্যাগ থেকে স্যাভলন বের করে কাব্যের হাত ধরে স্যাভলন লাগিয়ে দিয়ে মলম লাগিয়ে দিলো৷ কাব্য কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে আবার হাঁটতে শুরু করলো।
মনের ভেতর ব্যথা থাকলে
শরীরের ব্যথা অনুভব করা যায় না
কেউ এসে যদি শরীরে ও আঘাত করে
মনে হবে না কেউ আঘাত করছে।
কেউ মেরে ফেললো
হাসতে হাসতে মরে যেতে পারলে
এই অভিশপ্ত কষ্ট থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
আদিবা তিথিকে ফোন দিলো। তিথি ফোনটা ধরতেই, আদিবা বললো
– দোস্ত কই তুই?
– আমি ভার্সিটিতে। তুই আসবি না।
– আমি তো আসতাছি কিন্তু একটা ঘটনা ঘটেছে।
– কি আবার ঘটলো?
– তোর বন্ধু কাব্য আছে না।
– আমার কাব্য নামে বন্ধু নেই। ফোন রাখছি তুই আয়।
– আরে শোন। ঐ যায় হোক আজকে আমার সাথে ডাক্কা লেগে পড়ে গেছে। যেয়ে হাত কেটে গেছে।
– গাড়ির তলে পড়তে পারলো না।
– আরে ওর চোখমুখ ফোলা। মাথা নিচু করে আনমনে হাটছে।
– ভালো হয়েছে একদম। ও মরুক। ওর মরা উচিত।
– তুই এভাবে বলছিস কেন?
– কেন বলবো না? ও যদি আজ আমার কথাগুলো শুনতো তাহলে আজকের দিনটা ওকে দেখতে হতো না।
– মানে কি হয়েছে বল তো?
– ব্রেকআপ। আহারে কলিজার জিএফটা বড়লোক ছেলেকে বিয়ে করছে। সেই শোকে মাতোয়ারা৷
আদিবা অবাক হয়ে
– কি বলছিস কি তুই? এতদিনের ভালোবাসা।
– তোহামনি কি ওকে ভালোবাসতো নাকি। ইউস করছে এতোদিন। বড়লোক ছেলে পেয়ে দিছে ছুঁড়ে ফেলে। বুঝুক কেমন লাগে।
– তোর তো এই অবস্থায় ওর পাশে থাকা উচিৎ। কিন্তু তুই না থেকে।
তিথি কান্না করে দিয়ে
– ঐ কুত্তার পাশে আমি থাকবো না। ওকে আমি বলছিলাম কিন্তু ও আমাকে ঐ মেয়েটার জন্য অনেক খারাপ ব্যবহার করছে। আমি কখনো ভূলবো না৷ কুত্তা বুঝুক কি ভূল করছে।
তিথি ফোনটা কেটে দিলো। আদিবা অবাক হয়ে গেলো। আদিবা সোজা ভার্সিটিতে চলে গেলো।
সন্ধ্যার পর করিম মিয়া বাসায় ফিরে রেহানা বেগম বললো
– পোলাটার সাথে কথা হয়েছে।
– না। ফোনটা এখনো খুলেনি।
– ওর কি পথে কিছু হয়েছে।
– এমন কথা বলো না।
– আমাদের তো চিন্তা হয়। পৌছে অন্য কারো ফোন দিয়ে তো কল দিয়ে বলতে পারতো।
– চিন্তা করো না। দেখি ওর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় কি না?
রাত ১ টা। রাস্তার ল্যাপপোষ্টের নিচে বসে হাতে একটা ব্লেড নিয়ে বসে আছে কাব্য। কাব্যের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। তোহামনি কেন এমনটা করলে। আমার সুন্দর লাইফা এভাবে কেন নষ্ট করলে। আমার গরীব মা বাবাকে কেন এতো কষ্ট দিয়ালে। কেন? কি করেছিলাম আমি। আমি কোন মুখে দাঁড়াবো সবার সামনে। কতটা অন্যায় করেছি সবার সামনে। মা বাবাকে কতটা কষ্ট দিয়েছি। এতোটা অন্যায় করে ফেললাম আমি। এই মুখ নিয়ে আমি তাদের সামনে কিভাবে দাঁড়াবো। কতটা মিথ্যা বলে মা বাবাকে অত্যচার করছি। আমার আর বাচার অধিকার নেই। আমি বেঁচে থেকে এই ঘৃণ্য জীবন নিয়ে বাচতে পারবো না।
চাতক পাখির মতো চেয়েছিলাম
তুমি আসবে বলে
আমার ঘর আলোকিত করে
সাঝিয়ে রেখেছিলাম মনে
কত স্বপ্ন কত আশা
এক নিমিষেই করে দিলে শেষ
নেমে আসলো চারপাশে অন্ধকার
পারবো না আমি বাঁচতে আর
এই পৃথিবীতে।
করেছি ঘৃন্য কাজ
মা বাবার সাথে
করেছি খারাপ ব্যবহার
ভালোবাসার মানুষগুলোর সাথে
যেতে পারবো না আমি আর তাদের সামনে।
আলোকিত করো তুমি অন্যের ঘর
আমি না হয় চলে যায় আসল ঠিকানায়
দেখবে না কেউ জানবে কেউ
অভিশাপ দিবে সবাই আমাকে
মরেছে ভালো করেছে
ছেলেটা ছিলো খুব খারাপ।
কাব্য ব্লেডটা ধরে হাতে পোঁছ দিতে যাবে তখনি…….
(Waiting for next part)
নিঃস্বার্থ ভালোবাসা পর্ব ৫ |